সোহেল রানা রাজশাহীঃ রাজশাহীতে ভবনের নকশা অনুমোদনহীন বিল্ডিং এ ছয়লাব। গত তিন বছরে নকশা অনুমোদন পেয়েছে প্রায় ১২ শ ভবন। অথচ গত তিন বছরে ভবন তৈরী হয়েছে প্রায় ৫ হাজার। ভবনের নকশা তৈরিতে বিল্ডিং মালিকদের গুণতে হয়েছে মোটা অংকের উৎকোচ। যে সকল ভবনের মালিকরা উৎকোচ দিতে অস্বীকার করেছে তাদের অনুমোদন মিলেনি। আর এ নকশা বাণিজ্যের মূলহোতা রাজশাহী উন্নয়ন কতৃপক্ষের (আরডিএ) অথরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদ।
অভিযোগ আছে, আরডিএ'র নকশা অনুমোদন নিয়ে ভবন মালিকদের গুনতে হয়েছে ৫ লাখ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। আরডিএ'র অথরাইজ অফিসারের বেপরোয়া বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভবন মালিকরা। বেপরোয়া বাণিজ্যে দিনের পর দিন আরডিএ কতৃপক্ষের নিকট ঘুরছেন ভবন মালিকরা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ভবনের মালিকদের।
এর আগে ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় এই কর্মকর্তা ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য আদায় করা টাকাসহ ধরা পড়েছিলেন। বেশ কিছুদিন কারাগারে থেকে আবারও একই পদে বহাল হন তিনি।
আরডিএ'র গোপন তথ্যে জানা যায়, গত তিন বছরে রাজশাহী নগরীতে প্রায় ১২০০ টি ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে একতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত ভবন এগারো শত'র অধিক, এবং আটতলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত প্রায় ১০০টি। অনুমোদন দেওয়া ভবনের সংখ্যা জানতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে তথ্য নিতে হবে। এদিকে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে তথ্য পায়নি অনেকেই।
অভিযোগ উঠেছে, ওই সব ভবন অনুমোদন দিতে গিয়ে অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যাপক বাণিজ্যের আশ্রয় নিয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদ এখন আর নিজে নগদ টাকা নেন না। ২০০৭ সালে টাকাসহ যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর থেকে তিনি টাকা আদায় করেন ভিন্ন পন্থায়।
আরডিএর নানা হয়রানির ভয়ে ওই ভবন মালিকরা তাঁদের নাম প্রকাশ করতে রাজি না হলেও প্রয়োজনে যেকোনো তদন্ত সংস্থার কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে তাঁরা জানান।
ভুক্তভোগী ভবন মালিকরা বলেন, নকশা অনুমোদনের জন্য আরডিএর একটি নির্দিষ্ট ফি আছে। সেই ফির বাইরেও লাখ লাখ টাকা তুলে দিতে হচ্ছে অথরাইজড অফিসারকে। টাকা ছাড়া কোনো নথিতেই তিনি সই করেন না। আবার টাকা দিতে হচ্ছে তাঁর নিকটাত্মীয়র মাধ্যমে। তিনি টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দিতে বলেন। এর পরই মেলে অনুমোদন।
রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর, সাহেব বাজার, উপশহর এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে গেলে আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করেন। বিভিন্ন অজুহাতে নকশা অনুমোদনে বাধা দেন আরডিএ'র এই কর্মকর্তা।
উৎকোচের বিষয়টি অস্বীকার করেন আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি ওভার টেলিফোনে কোন তথ্য বা বক্তব্য দিতে পারবো না। তথ্য বা বক্তব্য নিতে হলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন ও বক্তব্য নিতে হলে অফিসে আসতে হবে। গত ২০০৭ সালে ঘুষের টাকাসহ আটকের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান।
এসব বিষয়ে জানতে আরডিএ'র চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, আরডিএ'র এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে জাল ব্যাংক ড্রাফট দিয়ে চাকুরী নেওয়ার অভিযোগসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি সংবাদ ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। অপরদিকে সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান দুদকের মামলায় জামিন পেয়ে আবারও পূর্বের ন্যায় নানা অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে গেছেন। অথরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদকে ২০০৭ সালে ঘুষ গ্রহণকালে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এখন প্রশ্ন থাকছে এতো বড় বড় অনিয়ম দুর্নীতি করার পরও কিভাবে তারা এখনো স্বপদে বহাল? এদের খুটির জোর কোথায়